মহান আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে ২১শে ফেব্রুয়ারি ভাষা শহীদের স্মরণে শ্রদ্ধা জানাতে লন্ডনে আলতাব আলী পার্কের শহীদ মিনারে প্রবেশ ঘিরে যুক্তরাজ্য বিএনপি ও আওয়ামী লীগের মধ্যে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। এ নিয়ে কমিউনিটিতে উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে। যেকোনো ধরনের সংঘর্ষ-সহিংসতা এড়াতে টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিল বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করা শুরু করেছে।
ওই দিন শহীদ মিনারে আগত নাগরিকদের নিরাপত্তা ও বিএনপি-আওয়ামী লীগের মধ্যে যেকোনো অপ্রীতিকর ঘটনা সামাল দিতে বাড়তি নিরাপত্তার ব্যবস্থা করবে কাউন্সিল। কাউন্সিলকে সহযোগিতা করতে পাশে থাকবে লন্ডন মেট পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থা।
এদিকে বিএনপি-আওয়ামী লীগের উত্তেজনা থামাতে কাউন্সিলের পক্ষ থেকে উভয় দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করা হয়েছে। ২১শে ফেব্রুয়ারি শহীদ মিনার এলাকায় যাতে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে সেজন্য বিএনপি-আওয়ামী লীগ নেতাদের পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
টাওয়ার হ্যামলেট কাউন্সিল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সম্ভাব্য সহিংসতা-সংঘর্ষ এড়াতে অতিরিক্ত পুলিশ ফোর্স, সাদা পোশাকের পুলিশ, স্পেশাল গোয়েন্দা পুলিশ মোতায়েন থাকবে। এছাড়া অতিরিক্ত সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো হচ্ছে।
স্থানীয় সময় গতকাল বুধবার বিষয়টি নিয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফিং করে টাওয়ার হ্যামলেটস্ কাউন্সিলের মেয়র অফিস। ব্রিফিংয়ে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মেয়র লুৎফুর রহমান বলেন, ‘২১শে ফেব্রুয়ারি মহান আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। এটি আমাদের মায়ের ভাষার ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক। এদিন ভাষা শহীদের শ্রদ্ধা জানাতে কমিউনিটির সকল শ্রেণির মানুষ আলতাব আলী পার্কের শহীদ মিনারে আসেন। দল-মত নির্বিশেষে এ অনুষ্ঠান আমাদের সকলের। তাই আসুন আমরা সবাই মিলে দিনটিকে শৃঙ্খলিতভাবে উপভোগ করি।’
একে অপরের প্রতি সহমর্মিতার আহ্বান জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘যুক্তরাজ্যের কাছে বাংলাদেশি একটি রোল মডেল। আমরা যাতে সেই সুনামটুকু অটুট রাখতে পারি। কোনো প্রকারের রাজনৈতিক সহিংসতা যাতে কেউ সৃষ্টি না করতে পারে সেজন্য সবার কাছে অনুরোধ রইলো।’
গোয়েন্দা পুলিশের সুপারিন্ডেন্ট ভিকি তানস্টল বলেন, ‘২১শে ফেব্রুয়ারি শহীদ মিনারে আগত নাগরিকদের নিরাপত্তা দিতে পুলিশি সবার সঙ্গে আছে। আশা করি সুশৃঙ্খল ও সুন্দর একটি ইভেন্ট সবাই উপভোগ করবেন।’
এদিকে টাওয়ার হ্যামলেটস্ কাউন্সিল জানিয়েছে, ২১শে ফেব্রুয়ারির অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রায় অর্ধ মিলিয়ন পাউন্ড অতিরিক্ত ব্যয় করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ৫ই আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতারা। অনেকেই আশ্রয় নিয়েছেন যুক্তরাজ্যে। এদিকে যুক্তরাজ্যে পালিয়ে আসা আওয়ামী লীগ নেতাদের বয়কট করতে আন্দোলনে নেমেছে যুক্তরাজ্য বিএনপি। এ নিয়ে জনসচেতনতা তৈরি করতে লিফলেট বিতরণ করেছে বিএনপি।
২১শে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা উপলক্ষে ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে লন্ডনের শহীদ মিনারে ফুল দিতে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা যাতে ঢুকতে না পারে সেজন্য হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বিএনপি নেতারা। তারা বলছেন, যারা নির্বিচারে বাংলাদেশে মানুষ হত্যা করেছেন, তারা যদি শহীদ মিনারে ভাষা শহীদের শ্রদ্ধা জানাতে যান, তাহলে শহীদ মিনারের পবিত্রতা নষ্ট হবে। বীর শহীদদের আত্মত্যাগকে অবমাননা করা হবে।
এমন ঘোষণার প্রতিক্রিয়ায় যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, ব্রিটেন একটি গণতন্ত্রের দেশ। ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে যে কেউ শহীদ মিনারে যেতে পারেন। এটি তার গণতান্ত্রিক অধিকার। সেই হিসেবে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ আগামী ২১শে ফেব্রুয়ারি ভাষা শহীদদের স্মরণে শ্রদ্ধা জানাতে শহীদ মিনার আসবে।