ঢাকা: ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। জনরোষের ভয়ে ওই দিনই গণভবন ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এরপর ৮ আগস্ট শান্তিতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত হয় অন্তর্বর্তী সরকার।
গত ৫ আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত ঘটনাবহুল সময় পার করছে দেশের মানুষ।
একের পর এক ইস্যু সামাল দিতে হচ্ছে নতুন সরকারকে। গণঅভ্যুত্থানের পর থেকে আলোচিত-সমালোচিত আন্দোলন, কর্মকাণ্ড ও উল্লেখযোগ্য ঘটনাগুলো তুলে ধরা হলো।
সনাতন ধর্মালম্বীদের ব্যানারে শাহবাগ অবরোধ
পুলিশ বাহিনীর কর্মবিরতির মধ্যেই অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পরদিন ৯ আগস্ট সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন দাবিতে শাহবাগে অবরোধ করেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। বিকেল সাড়ে ৩টা থেকে সন্ধ্যা সোয়া ৭টা পর্যন্ত প্রায় চার ঘণ্টা শাহবাগ মোড় অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন তারা। এরপর থেকে বিভিন্ন সময় অবরোধ ও বিক্ষোভসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছেন সনাতন ধর্মালম্বীরা।
চিন্ময় অনুসারীদের সহিংস বিক্ষোভ
জাতীয় পতাকার ওপর সাম্প্রদায়িক ধর্মীয় গোষ্ঠী ইসকনের গেরুয়া রঙের ধর্মীয় পতাকা উত্তোলন করে রাষ্ট্রের অখণ্ডতাকে অস্বীকার এবং জাতীয় পতাকা অবমাননা, বিভিন্ন সভা-সমাবেশে সাম্প্রদায়িক উসকানিমূলক বক্তব্য ও কর্মকাণ্ডের অভিযোগে সনাতন ধর্মবিশ্বাসী সংগঠন আন্তর্জাতিক শ্রীকৃষ্ণ ভাবনামৃত সংঘের (ইসকন) আলোচিত সংগঠক চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর গ্রেপ্তারকে কেন্দ্র করে মর্মান্তিক সংঘাত সৃষ্টি হয়।
পুলিশ সদস্যদের কর্মবিরতি
অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের আগেই প্রথম ধাক্কাটা আসে পুলিশ বাহিনী থেকে। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরদিন ৬ আগস্ট থেকে অনির্দিষ্ট কালের জন্য কর্মবিরতির ঘোষণা দেয় বাংলাদেশ পুলিশ কর্মচারী সংগঠন।
চাকরির ন্যূনতম বয়স ৩৫ করার দাবিতে আন্দোলন
চাকরির ন্যূনতম বয়সসীমা ৩৫ বছর করার দাবি নতুন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পরই আবার মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। ৭ সেপ্টেম্বর সরকারি চাকরিতে প্রবেশের ন্যূনতম বয়স ৩৫ বছর করার দাবিতে ঢাকার শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন আন্দোলনকারীরা। দাবি আদায়ে পরের দিনগুলোতে দফায় দফায় অবরোধ ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন তারা। পরবর্তীতে সরকার চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩২ বছর করে দেয়। সরকারের এ দাবি অনেকে প্রত্যাখ্যান করে থেমে থেমে কর্মসূচি দিয়ে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন এখনো।
সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ
একটি পূর্ণাঙ্গ স্বায়ত্তশাসিত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবিতে রাস্তা বন্ধ করে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সরকারি সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা। রাস্তা অবরোধ করে তারা আন্দোলন করায় নগরবাসীকে বেশ কিছুদিন তীব্র যানজটের ভোগান্তিতে পড়তে হয়। ২১ অক্টোবর শুরু হওয়া এই আন্দোলন বিরতি দিয়ে চলে নভেম্বরের শেষ পর্যন্ত।
ডাকাত আতঙ্ক, প্রতিরোধে মাঠে নামে ছাত্র-জনতা
ছাত্র-জনতার রক্তাক্ত অভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন এবং শেখ হাসিনা পলায়নের পর ৬ আগস্ট থেকে রাজধানীসহ সারা দেশে ডাকাত আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ডাকাত ঠেকাতে পাহারায় নামে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থী, সাধারণ জনতা, জামায়াত-শিবির, বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। বেশ কিছুদিন চলে সেই ডাকাত আতঙ্ক।
গোপালগঞ্জে সেনাবাহিনীর ওপর হামলা, গাড়িতে আগুন-ভাঙচুর
১০ আগস্ট গোপালগঞ্জে সেনাবাহনীর সদস্যদের ওপর হামলা চালায় স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। গোপালগঞ্জের ভেতর দিয়ে সেনা টহল দল যাওয়ার সময় উত্তেজিত আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা দেশীয় ধারালো অস্ত্র নিয়ে সেনাবাহিনীর দুটি গাড়ি ভাঙচুর করে এবং আরেকটি গাড়িতে আগুন ধরিয়ে পুড়িয়ে দেয়।